মোঃ রেজাউল-ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার গ্রাম অঞ্চলের বাজারের মধ্যে সাবদারপুর বাজারটি সব থেকে পুরাতন ও বড় বাজার। বাজারটির গা ঘেষে রেলস্টেশন। ওই রেলস্টেশনের পাশের জমিতেই গড়ে উঠেছে বিশাল আকারের কলা হাট। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরসহ এ অঞ্চলের কলা চাষীদের ভাগ্য বদলে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে এই কলা হাটটি। এই হাট থেকে সরকারও পাচ্ছে বছরে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব । এ কলা হাটে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার কলা বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কয়েকজন কলা ব্যবসায়ী ও হাট মালিক ।
বাজারটির সাথেই রেলস্টেশন থাকায় এলাকার কলা বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবহনের
সুবিধার্থে সাবদারপুরের মৃত আব্দুর রশিদ খান, মৃত শফিকুর রহমান, মৃত হাবিল
উদ্দিন বিশ্বাস, মৃত শাহ আলম সহ ৭-৮ জন এই কলার হাটটি স্থাপন করেন দীর্ঘ
৪০ বছর আগে। পরবর্তিতে এই কলার হাট প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অনেকে মারা
যাওয়াসহ নানাবিধ কারণে এত দিন তেমন প্রসারিত হয়নি কলা হাটটি। গত ১০
বছর আগে এলাকার আবুল কাশেম বাবু, অহেদ মেম্বারসহ ৫-৬ জন হাল ধরেন কলা
হাটটির। তারা বিভিন্ন অঞ্চলের কলা ব্যবসায়ী ও কলা চাষীদের সাথে যোগাযোগ করে কলা হাটটির প্রসারিত করেন। বর্তমানে হাটটি জমজমাট কলা হাটে পরিণত হয়েছে। আশপাশের কয়েকটি জেলার মধ্যে এ হাটটি সবচেয়ে বড় কলার হাট নামে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এ হাট থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কলা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ট্রেন বা ট্রাক যোগে নিয়ে যাচ্ছেন। যার ফলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই কলা হাটকে ঘিরে। এ কলা হাটের বিষয় নিয়ে সাফদারপুর গ্রামের কলা ব্যবসায়ী আবুল কাশেম বাবু’র সাথে কথা বললে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে এ কলা হাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ টাকার কলা বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন-
কোটচাঁদপুর উপজেলাসহ আশপাশ উপজেলার কলা চাষীরা প্রতিদিন এই হাটে কলা নিয়ে এসে বিক্রি করেন। ফলে তাদের কলা বিক্রিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। তিনি আরো বলেন প্রতিদিন ১টি করে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চালু করা গেলে এলাকার চাষীদের উন্নতি হতো আরো বেশি। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকার অহেদ মেম্বার বলেন- এখানে বিভিন্ন জাতের কলা
বিক্রি হয়। তার মধ্যে রয়েছে- কয়েক প্রকার তরকারি জাতীয় কলা, পাকা কলার মধ্যে রয়েছে -সাগর, চাঁপা, সরবি, কাবলি, ঠোঁটে কলাসহ বেশ কয়েক জাতের কলা।
তিনি বলেন -ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, চাপাই নবাবগজ্ঞ, বরিশাল, খুলনাসহ
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকারি কলা ব্যবসায়ীরা এই কলা হাটে আসেন কলা
কিনতে। এখানে কলা হাট প্রতিদিনই বসে। আর প্রতিদিনই পাইকারি
ব্যবসায়ীরা ট্রাক বা ট্রেন যোগে সুবিধা অনুযায়ী পরিবহন করে নিয়ে যান স্ব-
স্ব এলাকায়। উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের কলা চাষী এনামুল জানান, এ বছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে সরবি কলা কলার চাষ করেছেন। এখন আর তাকে কলা বিক্রয়ের জন্য চিন্তা করতে হয় না। সাবদারপুর কলাবাজারে গেলেই ন্যায্য দামে নগদ টাকায় অনাসে কলার কাদি ধরে বিক্রি হয়ে যায়। উপজেলার শোয়াদী গ্রামের কলা চাষী সরাফউদ্দীন জানান- তিনি ১০ বিঘা জমিতে (তরকারী জাতীয়) কাচ কলাসহ সরবী কলার চাষ করেছেন। সাবদারপুর কলা হাটে বাইরে থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসায় কলা’র চাহিদা থাকে সব সময়। যে কারণে কলা বিক্রিতে বেগ পেতে হয় না। তাছাড়া কাছাকাছি কলা হাট থাকাই
পরিবহনের খরচ ও কম। তিনি বলেন – আমাদের নিকট দূরত্বে কলা হাট হওয়ায়
বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে কলা চাষে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। ফলে এলাকায় কলা চাষ
ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলার রাজাপুর গ্রামের আনারুল ইসলাম জানান – তিনি সাবদারপুর হাট থেকে পাইকারি দামে কলা ক্রয় করে ট্রেনের মাধ্যমে পরিবহন করে রাজশাহী ও চাপাই নবাবগঞ্জ বিক্রি করেন। এখান থেকে কলা কিনে ট্রেনে পরিবহন করলে খরচ
অনেক কম হয়। সেই সাথে ঝামেলাও কম। ঢাকার কলা ব্যবসায়ী রিয়ন জানান- এখানে সব ধরনের চাহিদা অনুযায়ী কলা পাওয়া যায় বিধায় এখান থেকে আমরা পাইকারি দামে কলা ক্রয় করে ঢাকাতে নিয়ে যায়। তবে তিনি বলেন- সম্প্রতি কৃষি পণ্য স্পেশাল ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে ট্রেনটি চলছে সপ্তাহে একদিন মঙ্গলবার। এ ট্রেনটি সপ্তাহে ৫/৬ দিন চললে আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হতো। কাঁচা মাল ট্রাকে অনেক নষ্ট হয় দাগ পড়ে যায়। ট্রেনে তা হয় না। তাছাড়া অনেক কম খরচে ট্রেনে পরিবহন করা যায়। সাফদারপুর রেল স্টেশন মাস্টার গোলাম রসুল জানান, অনেক আগে থেকেই পাশের কলাহাট থেকে ব্যবসায়ীরা কলা ক্রয় করে কুষ্টিয়া, পাকশী, রাজশাহী,
চাপাই নবাবগঞ্জসহ ওই অঞ্চল গুলোতে ট্রেন যোগে পরিবহন করে নিয়ে যান। গত
সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে খুলনা-ঢাকা কৃষি পণ্য স্পেশাল ট্রেন চলাচল। যা চলছে
সপ্তাহে একদিন মাত্র ১টি করে ট্রেন । তিনি বলেন – প্রচারণা ছাড়াই এই ট্রেন
চলায় সপ্তাহে যৎসামান্য কৃষি পণ্য আমরা ঢাকায় পাঠাতে পেরেছি। তিনি আরো
বলেন- ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে প্রতিদিন ১টি করে কৃষি পণ্য স্পেশাল ট্রেন
চলাচল করলে এসব ব্যবসায়ীসহ কৃষি পণ্য চাষীদের উপকারে আসতো। রেল
বিভাগও হতো লাভবান । তিনি বলেন- এ ট্রেন সপ্তাহে একদিন হওয়ায় তেমন কোন
চাহিদা নেই। কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাজিবুল হাসান এ প্রতিবেদককে
জানান- সাবদারপুরে কলা হাট হওয়ায় এ অঞ্চলের কলা চাষীরা ন্যায্য দামে কলা বিক্রি করতে পাচ্ছেন। ফলে চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন। সেই সাথে দিনে দিনে কলার চাষও এ অঞ্চলসহ আশপাশ এলাকাতে বাড়ছে। আমরা এখন বর্তমান জাতের কলার পাশাপাশি
নতুন জাতের কলা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি কলা চাষীদের। বর্তমানে কোটচাঁদপুর
উপজেলাতেই কলা চাষ হচ্ছে ৩০০ হেক্টর জমিতে।