মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গাজা নীতি নিয়ে অসন্তুষ্ট মিশিগানের মুসলিম নেতারা সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছেন। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়াতেই তারা ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন।
স্থানীয় সময় শনিবার মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরতলির নভি এলাকায় একটি সমাবেশে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত হয়ে তাকে সমর্থন জানান ওই অঞ্চলের মুসলিম নেতারা।
ইমাম বেলাল আলজুহাইরি নামের এক মুসলিম নেতা বলেন, আমরা মুসলিম হিসেবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে আছি। কারণ তিনি যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ট্রাম্প প্রসঙ্গে আলজুহাইরি যোগ করেন, ‘তিনি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্বজুড়ে রক্তপাত বন্ধ হওয়া উচিত এবং আমরা বিশ্বাস করি, ট্রাম্প এই পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবেন’।
রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এ সময় আমেরিকান মুসলিম ও আরব ভোটারদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তারা শুধু মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি চায় এবং আমি সেই পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি’।
এদিকে মিশিগানের ঐতিহ্যগতভাবে ডেমোক্রেট সমর্থিত মুসলিম সম্প্রদায় বাইডেন প্রশাসনের ইসরাইলের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের কারণে ক্রমশ অসন্তুষ্ট। গাজায় বেসামরিক হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও চাপের মুখে পড়েছে।
২০২০ সালে মিশিগান অঙ্গরাজ্যে বাইডেন ট্রাম্পকে পরাজিত করলেও, বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। এবার ট্রাম্পের প্রতি কিছু মুসলিম নেতার সমর্থন এই রাজ্যে তারই জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
মার্কিন আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের সমর্থন পেতে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মিশিগানের মুসলিম নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হন।
এতে ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ছিল যে, তিনি মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা পুনর্বিবেচনা করে বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন।
এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ডেট্রয়েটে এক সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, মিশিগান এবং যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম ও আরব ভোটাররা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি এবং চলমান যুদ্ধের অবসান চান। এটাই তাদের একমাত্র চাওয়া।
উল্লেখ্য যে, ২০১৭ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প প্রথম মাসেই সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ—ইরাক, সিরিয়া, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন—থেকে ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার আদেশ জারি করেছিলেন।
এছাড়া, তিনি সিরিয়ার শরণার্থীদের ওপর অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সাময়িকভাবে সব শরণার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন।
তবে বর্তমানে ট্রাম্পের প্রচার শিবির আরব ও মুসলিম সম্প্রদায়ের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে সমর্থন লাভের চেষ্টা করছে। মুসলিম ভোটারদের বিশ্বাস, ট্রাম্প শান্তির পথে হাঁটবেন এবং যুদ্ধ-বিরোধী প্রতিশ্রুতি পূরণ করবেন।
মার্কিন মুসলিম নেতারা বলছেন, ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তির আশা করছেন তারা।
শনিবারের সমাবেশে ট্রাম্প আরও বলেন, ইহুদি, ক্যাথলিক, ইভাঞ্জেলিকাল, মরমন এবং মুসলিমরা আগে কখনও যেমনটা করেননি, তেমনটা করেই এখন আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন।
মিশিগানে প্রায় ৩ লাখ মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা মানুষ বসবাস করেন। যা রাজ্যটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩.১ ভাগ।
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেন মিশিগানে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করেছিলেন মাত্র ১.৫ লাখ ভোটের ব্যবধানে। যদিও ২০১৬ সালে ট্রাম্প এখানে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে মাত্র ১১,০০০ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছিলেন।
মিশিগানের মুসলিম ও আরব সম্প্রদায়ের সমর্থন এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ট্রাম্প এই সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন, যা বাইডেন প্রশাসনের নীতির সঙ্গে বৈপরীত্য সৃষ্টি করেছে। সূত্র: আনাদোলু ও জিও নিউজ