আজ: সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   | সময়: সকাল ৯:১৭ |

শারিরীক প্রতিবন্ধী দুই  সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত  মৃত অমেদ আলীর স্ত্রী নুরুন্নাহার

এস,এম,রুহুল আমিন,জয়পুরহাট প্রতিনিধিঃ

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের আমিরপুর কয়েশকুল গ্রামের অমেদ আলী – নুরুন্নাহার দম্পতির চার ছেলে মেয়ের মধ্যে শারিরিক প্রতিবন্ধি রেনু বেগম (৪০) ও বেলাল হোসেন (৩০)।

স্বাভাবিক ভাবেই জম্ম নিয়েছিল তারা। এমন ফুটফুটে ছেলে মেয়ে সংসারে আসায় আনন্দের যেন শেষ ছিল না অমেদ দস্পতির।  বেলাল রেনুর বেড়ে ওঠার সাথে গুটি গুটি পায়ে হাটা চলা আর ভাঙ্গা ভাঙ্গা কথায় আনন্দে ভরে উঠেছিল তাদের সংসার। হঠাৎ অবুঝ  শিশু দুটি পোলিও রোগে আক্রান্ত হয় ।  পরিবারে পক্ষ থেকে অনেক চিকিৎসা ও ডাক্তার দেখানোর পরও আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেনি তারা। হয়ে যান শারিরিক প্রতিবন্ধি।

সরেজমিন আমিরপুর কয়েশকুলের বাড়ীতে গিয়ে দেখা যায়, রেনু বেগম তার নিপুন হাতে কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত। আর পাশেই বৃদ্ধ মা নুরুন্নাহার বেগম বারান্দায় একপাশে বসে আছে। আর ঘরে বসে বেলাল পড়াশুনায় ব্যস্ত। বেলাল শারিরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে স্কুলে যেতে না পারলেও বাড়ীতে বসে ১ম থেকে ১০ শ্রেণির সমস্ত বই আয়ত্ব করে ফেলেছেন। শুধু তাই নয় তিনি  ৫ম শ্রেণির ছাত্র/ছাত্রীদের নিয়মিত টিউশনি করে নিজের রোজগারের ব্যবস্থা করেছেন। তিনি দশম শ্রেণির ছাত্র/ছাত্রীদের টিউশন করাতেও সক্ষম বলে জানান। 

শারিরিক প্রতিবন্ধি বেলালের বড় বোন রেনু বেগম শুধু কাঁথা সেলাই নয়, রান্না বান্না, ঝাড়ু মোছ সহ বাড়ীর সকল কাজ করতে পারেন। সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা পেলে তাদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের কে স্বাবলম্বী করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

বেলাল হোসেন বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী হিসাবে জম্ম নেয়নি। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ আমরা শারিরিক প্রতিবন্ধি। গ্রামের অনেকেই স্কুলে গিয়ে পড়াশুনা করার সুযোগ হলেও আমাদের তা হয়নি। 

রেনু বেগম বলেন, কোন অনুদান নয়, সরকারী কোন কারিগড়ি প্রশিক্ষণ কোর্সে প্রশিক্ষণ প্রদান করলে আমরা আমাদের কাজের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো। 

তবে তাদের মা নুরুন্নাহার কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, এভাবেই ৪০ বছর থেকে আদর যত্ন করে তাদের আগলে রেখেছি। তাদের পিতাও মৃত্যু বরণ করেছে কয়েক বছর আগে। আমারও বয়স হয়ে গেছে। কবে ডাক আসবে জানি না। আমার অবর্তমানে তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় আছি। তারপরও তাদের আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিয়েছি।

তাদের বড় ভাই রবিউল ইসলাম বলেন, আড়াই বছর বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়। আমরা না জানার কারণে তারা শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধি হয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, তারা শারিরিক প্রতিবন্ধি হলেও তাদের অনেক প্রতিভা আছে। সরকারীভাবে কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও তারা নিজেরাই উদ্যোক্তা স্বাবলম্বী হতে পারবে। 

উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বলেন, সমাজ সেবা কার্যালয় থেকে তাদের প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধীদের সহযোগিতা ও প্রশিক্ষণের জন্য আরো সংস্থা রয়েছে। তারা আগ্রহ  দেখালে উপজেলা সমাজ সেবা অফিস তাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top