রেজাউল- কোটচাঁদপুরঃ
শরতের শিশির আর শরীরের শুষ্কতা জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পেতে এখন বাজারে চলে এসেছে আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি বিভিন্ন রকমের কম্বল ও গরম চাঁদর। তবে বাঙালির শীতকাতুর হৃদয়ে লেপের স্থানই আলাদা। প্রচন্ত শীতে শিমুল তুলোর লেপ গরীব ও মাধ্যবিত্তদের পরম বন্ধু। শীত আসার আগেই তাই লেপ-তোষক বানানোর ধুম পড়েছে কোটচাঁদপুরে। ব্যস্ত সময় পার করছে কোটচাঁদপুরের কারিগররা। গতকাল লেপ তৈরির সময় সরেজমিনে কথা হয় ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার সাবদারপুর বাজারে রনি বেডিং হাউজের মালিক মোঃ রনির সাথে, তিনি জানান সারা বছর তেমন কোন অর্ডার থাকে না, শীতের শুরুতেই লেপের অর্ডার আসে। আকার ভেদে ১টি লেপ তৈরী করতে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর যাবত এ পেশায় নিয়োজিত আছেন। রনি বেডিং হাউজের মতই কোটচাঁদপুর বাজারে সাহা বেডিং হাউজেও চলছে তৈরীর কাজ। সকল লেপ-তোষকের দোকানে শোভা পাচ্ছে লাল আভা। কিন্তু কখনো ভেবেছেন লেপের তুলো কেন লাল কাপড়েই মোড়ানো হয়? প্রবীনদের কাছে শোনা যায় লাল কাপড়ে লেপ তৈরি শুরু হয় বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার নবাব মুর্শিদকুলি খানের আমল থেকে। সেই সময়েই লাল মখমলের কাপড় দিয়ে লেপ তৈরি শুরু। মুর্শিদাবাদে লম্বা কার্পাস তুলোর চাষ হতো, সেই তুলো লাল রঙে চুবিয়ে মোলায়েম মখমলের কাপড়ে ভরা হতো। সুগন্ধির জন্য ছিটিয়ে দেয়া হতো আতর। কিন্তু মখমল ও সিল্কের দাম সাধারণের হাতের বাইরে। তাই সাধারণ মানুষ লাল কাপড়েই তুলা ভরা শুরু করেন।
এই গল্প প্রচলিত রয়েছে ধুনুরিদের একাংশের মধ্যেও। সেই থেকে লাল কাপড়ে লেপ বানানোর রীতি চলে আসছে। তবে এই মতের বিরুদ্ধ মতো কম নয়। কেউ কেউ বলেন, লেপ কখনো ধোয়া যায় না। তাই গাড় রঙের লাল কাপড় ব্যবহারের ফলে ময়লা কম দেখা যায়।
অনেকেই আবার মনে করেন, এ সব নিছকই গল্প। ইতিহাস বা ঐতিহ্য নয়। এ কেবল রীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। বরং ব্যবসার খাতিরে দূর থেকে ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই লাল কাপড়ে মুড়ে রাখা হয় শীতের লেপ। তবে কারণ যাই হোক, হেমন্ত পেরিয়ে শীতের দিকে এগোলেই যে মন একটু ‘লেপ লেপ’ করবে, তা অস্বীকার করতে পারবে না অনেকেই। তবে যতো বাহারি কাপড় দিয়ে গরমের জিনিস তৈরি করা হোক না কেন। শিতে শিমুল তুলা দিয়ে তৈরি লেপ গায়ে দেওয়ার মজা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।