ব্যাটিং ব্যর্থতায় ভারতের বিপক্ষে হার দিয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করলো সফরকারী বাংলাদেশ। গত রোববার সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ভারতের কাছে ৭ উইকেটে হেরেছে টাইগাররা। প্রথমে ব্যাট করে ১৯.৫ ওভারে ১২৭ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। জবাবে ৪৯ বল বাকী রেখে জয়ের স্বাদ পায় ভারত। এই জয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল টিম ইন্ডিয়া। গোয়ালিয়রের সিন্ধিয়া ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ভারতের পেসার অর্শদীপ সিংয়ের ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মারার পরের ডেলিভারিতে ক্যাচ দিয়ে ৪ রানে ফিরেন ওপেনার লিটন দাস। দ্বিতীয় ওভারে পেসার হার্ডিক পান্ডিয়ার বলে ছক্কা মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। কিন্তু পরের ওভারের প্রথম বলে অর্শদীপের ডেলিভারিতে বোল্ড হবার আগে ৮ রান করেন তিনি। ১৪ রানে ২ উইকেট পতনের পর পাওয়ার প্লেতে আর কোন বিপদ হতে দেননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়। স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীর করা পঞ্চম ওভারে ২টি চার ও ১টি ছক্কা ১৫ রান তুলেন শান্ত ও হৃদয়। এতে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৩৯ রান পায় বাংলাদেশ। ধীরে ধীরে বড় হতে থাকা শান্ত-হৃদয়ের জুটি ভাঙেন বরুণ। লং অনে পান্ডিয়াকে ক্যাচ দেন ২টি চারে ১৮ বলে ১২ রান করা হৃদয়। ২৭ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন তারা। হৃদয়ের বিদায়ে ক্রিজে এসে ২ বলের বেশি টিকতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটার মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। মাত্র ১ রান করে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা পেসার মায়ায় যাদবকে উইকেট উপহার দেন রিয়াদ। রিয়াদের মত এক অঙ্কে আটকে থেকে সাজঘরে ফিরেন জাকের আলি। মিডিয়াম পেসার নীতিশ কুমারের বলে ছক্কা মারার পর বরুণের দ্বিতীয় শিকার হন তিনি। ৮ রান করে বরুণের গুগলিতে বোল্ড হন জাকের। দশম ওভারের মধ্যে ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জুটির গড়ার চেষ্টা করেন শান্ত ও মেহেদি হাসান মিরাজ। ১৬ বলে ১৮ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন তারা। এক প্রান্ত আগলে খেলা থাকা শান্তকে ফিরতি ক্যাচে বিদায় করেন স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর। ১টি করে চার-ছক্কায় ২৫ বলে ২৭ রান করেন শান্ত। মায়াঙ্কের করা ১৩তম ওভারে পরপর দুই বলে ছক্কা ও চার মারেন ক্রিজে নতুন আসা রিশাদ হোসেন। ঐ ওভারে ১৫ রান পায় বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুটা ভালো করেও বরুণের তৃতীয় শিকার হয়ে ৫ বলে ১১ রানে ফিরেন রিশাদ। রিশাদ ফেরার পর অষ্টম উইকেটে মিরাজ ও তাসকিনের ২১ বলে ২৩ রানের জুটিতে ১’শ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ। দলীয় ১১৬ রানে তাসকিন ১২ রানে রান আউট হলেও বাংলাদেশকে লড়াকু পুঁজি এনে দিতে লড়াই করেছেন মিরাজ। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে মুস্তাফিজুর রহমানের আউটে ১২৭ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। অন্যপ্রান্তে ৩টি চারে ৩২ বলে ৩৫ রান তুলে অপরাজিত থাকেন ১৪ মাসের বেশি সময় পর টি- টোয়েন্টি খেলতে নামা মিরাজ। অর্শদীপ ১৪ রানে ও বরুণ ৩১ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। ১২৮ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২ ওভারে ২৫ রান তুলে ফেলে ভারত। ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ৭ বলে ১৬ রান করে প্রথম ব্যাটার হিসেবে রান আউট হয়ে ফিরেন ওপেনার অভিষেক শর্মা। দ্বিতীয় উইকেটে আরেক ওপেনার সঞ্জু স্যামসনকে নিয়ে ২১ বলে ৪০ রানের জুটি গড়ে পাওয়ার প্লেতে ভারতকে ৭১ রান এনে দেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাওয়ার প্লেতে এটিই সর্বোচ্চ রান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মুস্তাফিজের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা জাকেরকে ক্যাচ দিয়ে থামেন ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ১৪ বলে ২৯ রান করা সূর্য। অধিনায়ক ফেরার কিছুক্ষণ পর সাজঘরের পথ ধরেন স্যামসনও। ৬টি বাউন্ডারিতে ১৯ বলে ২৯ রান করে মিরাজের বলে রিশাদকে ক্যাচ দেন তিনি। দলীয় ৮০ রানে স্যামসন ফেরার পর ক্রিজে এসে ব্যাট হাতে বাংলাদেশের বোলারদের উপর তান্ডব চালান পান্ডিয়া। তার ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ১৬ বলে ৩৯ রানের ইনিংসে ৪৯ বল বাকী রেখে জয়ের দেখা পায় ভারত। চতুর্থ উইকেটে নীতিশ কুমারের সাথে ২৪ বলে ৫২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন পান্ডিয়া। মুস্তাফিজ ও মিরাজ ১টি করে উইকেট নেন। আগামীকাল বুধবার দিল্লিতে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত।
স্কোর কার্ড:
বাংলাদেশ: ১২৭/১০, ১৯.৫ ওভার (মিরাজ ৩৫*, শান্ত ২৭, অর্শদীপ ৩/১৪)।
ভারত: ১৩২/৩, ১১.৫ ওভার (হার্ডিক পান্ডিয়া ৩৯*, সূর্যকুমার ২৯, মিরাজ ১/৭)।
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী।