এফ এম আব্বাস উদ্দিন কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা এনায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।তিনি এই কর্মস্থলে এসে ভূমির কর আদায় করছেন ঠিকই কিন্তু আদায় কৃত সিংহ ভাগ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না।নাম মাত্র টাকা ভূমির উন্নয়ন কর পরিশোদ রশিদে উল্লেখ করা হচ্ছে।এ ছাড়া ভূমি সহকারি কর্মকর্তা এনায়েত ঘুষের বিনিময়ে খাস খতিয়ানের তালিকাভূক্ত ভূমির উন্নয়ন করের রশিদও দিচ্ছেন।আর এসব করা হচ্ছে ভূমির মালিকদের সাথে দর কষাকষির মধ্য দিয়ে।ঘাগড়া ভূমি অফিসের রাজস্ব আদায় সন্তোষ জনক না বিষয়টি উপজেলা কর্তৃপক্ষ অবহিত আছেন।তার পরও ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে না প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।এই নিয়ে শুরু হয়েছে এলাকায় সমালোচনা।
জানা গেছে মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি কর্মকর্তা এনায়েত বহু বছর ধরে মিঠামইন উপজেলাতে কর্মরত আছেন।উপজেলার এক অফিস থেকে অন্য অফিসে শুধু বদলি হচ্ছেন।কয়েকবার অন্য উপজেলায় বদলি হলেও তিনি তদবীর চালিয়ে তার বদলি বাতিল করতে সক্ষম হয়েছেন।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভূমি সহকারি কর্মকর্তা এনায়েত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের প্রিয় ভাজন হিসেবে সুপরিচিত। সাবেক রাষ্ট্রপতির ভাই ভাতিজার ভূমির জালিয়াতির বহু অপকর্মের সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন । এর আগেও ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত ছিলেন। তিনি এই কর্মস্থলে এসে ঘাগড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসটিকে দর কষাকষির বাজার হিসেবে পরিণত করেছেন। এলাকার ভূমির মালিকগণ তাদের নিজের জমির কর পরিশোধ করার জন্য ভূমি অফিসে আসলে তখন ভূমি কর্মকর্তা এনায়েত ইচ্ছে মত করের পরিমাণ দাবি করেন।যেমন ২ একর ভূমির জন্য ৬০/৭০হাজার টাকা দাবি করা হয়।বলা হয় আপনাদের ভূমির কর ৩০/৪০বছরের বকেয়া কর রয়েছে।ভূমি কর্মকর্তার দাবি ধাওয়ার এই কথা শুনে হতবাক হয়ে পড়ে ভূমির মালিকগণ।তখনই ভূমির কর দেওয়া নেওয়া নিয়ে শুরু হয় দর কষাকষির। ভূমি কর্মকর্তা এনায়েত তার ইচ্ছামত টাকা আদায় করে ভূমির কর পরিশোধ রশিদে খুবই কম টাকা উল্লেখ করে ধরিয়ে দেয় ভূমির মালিকদেরকে। ফলে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে না আদায়কৃত পুরো টাকা।
সূত্রমতে ভূমি সহকারি কর্মকর্তা এনায়েত উল্লাহ সরকারি রাজস্ব (কর ) ফাঁকি দেওয়ার কৌশল হিসেবে ভূমির বকেয়া কর উল্লেখ না করে শুধু এক দুই বছরের আদায় দেখাচ্ছেন।যারা ভূমি কর্মকর্তার সাথে দর কষাকুশিতে রাজি না হয় তারা ঠিকই গুনতে হয় ২০-২৫ বছরের ভূমির বকেয়া কর। তবে এ ধরনের লোকের সংখ্যা একেবারেই কম। বেশিরভাগ ভূমির মালিকরা সুবিধা নেওয়ার জন্য ভূমি কর্মকর্তার সাথে দর কষাকষিতে রাজি হয়। এসবের ফলে সরকারের রাজস্ব আদায়ের টাকা কমতে শুরু করেছে।আর লাভবান হচ্ছেন ঘাগড়া ভূমি অফিসের কর্মরত ভূমি কর্মকর্তা এনায়েত।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ভূমি সহকারি কর্মকর্তা এনায়েত প্রায় ১৪ /১৫একর ভূমির উন্নয়ন কর আদায় করেছেন মওকুফ হিসেবে। সরকারের নিয়ম মতে তিনি তা করতে পারেননি। সম্প্রতি ঘাগড়া মৌজারখতিয়ান নং ১৫৩১ হোল্ডিং নাম্বার ১১ ৮৩ জমির পরিমাণ ১৪ একর ৩২ শতাংশরভূমির কর বাংলা সালের ১৪০৮ থেকে ১৪৩০ সাল পর্যন্ত অর্থাৎ এই ২২ বছরের কর আদায় দেখিয়েছেন শুধু ৫ হাজার ৩শত ১৪ টাকা মাত্র।অপরদিকে ভূমি কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় সিহারা মৌজার হোল্ডিং ও খতিয়ান নাম্বার ৪২ জমির পরিমাণ ১একর ৫৩ শতাংশর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ রশিদে ১৯ হাজার ৯শত টাকা আদায় দেখিয়েছেন।
ঘাগড়া মৌজার খতিয়ান নাম্বার ১৯৫ জমির পরিমাণ৬একর ২৫শতাংশের ৯৬ টাকা মাত্র আদায় দেখিয়েছেন।ভরা মৌজার খতিয়ান নাম্বার ১১ ০৩জমির পরিমাণ ১০ একর ৫৯শতাংশের কর আদায় দেখিয়েছেন ৪হাজার ৫শত ৯৩টাকা।সিহারা মৌজার ৪ নাম্বার ৭১৩জমির পরিমাণ ৩একর ৪৮শতাংশের কর আদায় করেছেন ১২০ টাকা।সিহারা মৌজার খতিয়ান নাম্বার ১৫১পরিমাণ ১৩একর ৪৮শতাংশের শুধু হাল সনের কর আদায় দেখিয়েছেন ২হাজার ৬ছয় শত ৯৬টাকা মাত্র।ঘাগড়া মৌজার খতিয়ান নাম্বার ১৫৮১হোল্ডিং নাম্বার ১৫৬১জমির পরিমাণ ১৮ একরের ভূমির উন্নয়ন কর আদায় দেখিয়েছেন ৬হাজার ৫শত ৮টাকা মাত্র।ডাইনগাও মৌজার খতিয়ান নাম্বার ২৭৯জমির পরিমাণ ৩একর ৭৭শতাংশের কর আদায় দেখিয়েছেন ৯৫টাকা মাত্র lউল্লেখ করা প্রয়োজন যে ২৭৭নাম্বারখতিয়ানটি ৫ব্যক্তির নামে আর এস রেকর্ড থাকলেও মূলত এটি খাস খতিয়ান ভূক্ত।ভূমি সহকারি কর্মকর্তা এনায়েত ঘুষের বিনিময়ে যা ইচ্ছে তাই করছেন।তিনি সরকারি স্বার্থগুলো মোটেও দেখছেন না। এমন বহু অভিযোগ এখন গণমাধ্যম কর্মীদের হাতে এসে পৌঁছেছে।
অভিযোগে আরো জানা গেছে ভূমি কর্মকর্তা এনায়েত নামজারি করার নামে বেপরোয়া ঘুষের রাজত্ব কায়েম করেছেন।ঘুষ ছাড়া কারো নাম জারির তদন্ত প্রতিবেদন দিচ্ছেন না।একজনের জমি অন্যজনের নামে নাম জারি করে দেওয়ার অভিযোগ ও রয়েছে।তিনি আদালতের আদেশ মানছেন না বলে ও জানা গেছে।এসব বিষয়ে ভূমির সহকারি কর্মকর্তা এনায়েত উল্লাহর সঙ্গে কথা হলে তিনি বিষয়গুলো অস্বীকার করেন।রাষ্ট্রের স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।