আজ: সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   | সময়: সন্ধ্যা ৬:২৯ |

৪ বছর যাবত বন্ধ যশোর-কোটচাঁদপুর-চুয়াডাঙ্গা রুটের  সরাসরি বাস চলাচলঃ (যাত্রী ভুগান্তি চরমে দেখার যেন কেউ নেই)

আশরাফুজ্জামান- কোটচাঁদপুরঃ

যশোর-চুয়াডাঙ্গা ভায়া কালীগঞ্জ- কোটচাঁদপুর জীবননগর  রুটে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে যশোর  কালীগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা  মোটর মালিক সমিতি। ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর হতে প্রায় ৪ বছর  ধরে সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় একাধিক বার সংবাদ প্রকাশিত হলেও টনক নড়েনি কতৃপক্ষের। যার কারণে চরম ভোগান্তি ও হতাশায় সাধারণ যাত্রীরা।

জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা মালিক সমিতির বাস নিয়মিত চুয়াডাঙ্গা থেকে সরাসরি যশোর পর্যন্ত চলাচল করে থাকে। অপরদিকে কালীগঞ্জ ও যশোর মালিক সমিতির বাস যশোর থেকে ছেড়ে এসে চুয়াডাঙ্গা পর্যন্ত চলাচল করে। উভয়পক্ষের মালিক সমিতির ভেতরে দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় যশোর ও কালীগঞ্জ বাস মালিক সমিতির বাস হাসাদাহ পর্যন্ত চলাচল করছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। হাসাদহ বাজারটি একটি বাস টারমিনালে পরিনত হয়েছে ।

২০১৩ সালে ঠিক এরকম অবস্থার সৃষ্টি হয়। তখন সমস্যার সমাধান হতে দীর্ঘ সময় লাগে। আবারও মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হওয়াতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

দর্শনা হতে যশোর গামী যাত্রী সাগর  হোসেন বলেন, তিনি প্রতি সপ্তাহে কাজের জন্য যশোর যান, কিন্তু সরাসরি বাস বন্ধ থাকায় তার সময় বেশি অপচয় হচ্ছে এবং যাত্রা খরচ ও বেড়ে গেছে।

খালিশপুর থেকে দর্শনা গামী যাত্রী জাকির হোসেন বলেন, তিনি রেগুলার খালিশপুর থেকে দর্শনা যান অফিস করতে, সরাসরি বাস না থাকায় প্রায় পড়তে হচ্ছে ভোগান্তির মুখে। অনেকদিন অফিসে দেরিতে পৌছাচ্ছেন তিনি।

কালীগঞ্জ থেকে চুয়াডাঙ্গা গামী যাত্রী বাবলু মিয়া বলেন, তার শ্বশুর বাড়ি চুয়াডাঙ্গায় , তিনি পূর্বে সরাসরি বাস থাকায় সহজে যাতায়াত করতে পারতেন, হঠাৎ বাসস্টান্ডে এসে জানতে পারেন বাস বন্ধ, তিনি তার পাঁচবছর বয়সী শিশু সন্তান দুইটি বড় ব্যাগ নিয়ে এখন দুঃচিন্তায় আছে যে কিভাবে পৌঁছাবেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শাপলা বাসের চালক জানান, যাত্রীরা চরম দূর্ভোগের স্বীকার হচ্ছে। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এ দূর্ভোগ তাদের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠছে দিন দিন। কিন্তু উপর মহলে থাকা মালিক সমিতির সিদ্ধান্তের কাছে জিম্মি যানবাহনের স্টাফ সহ যাত্রীরা। তারা দ্রুত এ সমস্যার প্রতিকার চান।

আরেকজন ড্রাইভারের কাছে বাস বন্ধ থাকার কারন জানতে চাইলে তিনি জানান, যশোর, কালীগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা মোটর মালিক সমিতির মধ্যে বাসের ট্রিপ সংখ্যা নিয়ে ভাগাভাগির জের ধরে বিরতিহীন ভাবে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা-যশোর ভায়া জীবননগর রুটে চুয়াডাঙ্গা থেকে ৪০টি বাস চলাচল করে। এর মধ্যে খুলনা রুটের বাসও রয়েছে। ২০১৩ সালে একই রুটে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে কালিগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির বাঁধার মুখে ২০ মাস ১১ দিন সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ ছিল। ওই সময়েও হাসাদহ পর্যন্ত বাস চলাচল করতো । অনেক বাস মালিক অল্প সড়কে বাস চালিয়ে ভালো টাকা পাওয়ার কারনে বিষটি সমাধান করতে চাইছে না বলে অভিযোগ উঠেছে ।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক  তোফায়েল হোসেন তপন বলেন, বাসের টিপ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে একটা ঝামেলা আছে। সেই কারণে  গত ৫ আগষ্টে পর থেকে আমরা মৌখিক ভাবে বারবার খবর  দিয়ে বিষয়টি সমাধান করার জন্য চুয়াডাঙ্গা মালিক সমিতিকে বলা সত্তেও কোন কাজ হচ্ছে না। তারা বিভিন্ন তালবাহানা করছে। চুয়াডাঙ্গা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক   আবুল কালাম এর  সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ওনাদের অযুক্তিক দাবি পুরন করা সম্ভব না। ২০ বছর আগের টিপ সব ফেরত চাচ্ছে। তাদের পক্ষ থেকে সমাধানের জন্য বলছে। কিন্তু তারা একক সিদ্ধান্ত নেয়। এর আগেও আমরা একাধিক বার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তবে খুব তাড়াতাড়ি যশোর বাস মালিক সমিতির সাথে বসে একটা সুস্থ সমাধান হবে বলে তিনি আশা করছেন। এখন সাধারণ যাত্রী দের দাবি মালিক পক্ষের দ্বন্দ্বের মুখে ক্ষতি গ্রস্ত ও হয়রানির শিকার হচ্ছি আমরা। কোটচাঁদপুর উপজেলা  মানবাধিকার সংস্থার সভাপতি ও গণমাধ্যম কর্মী মোঃ রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এ রুটে চলাচলকারী লক্ষ লক্ষ মানুষ। আমরা এর একটা সমাধান চাই। যাত্রী হয়রানি বন্ধ হওয়া উচিত।  এক সপ্তাহের মধ্যে এর সমাধান না হলে উপজেলা প্রশাসনের কাছে স্বরক লিপি, মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। যশোর – ঝিনাইদহ – চুয়াডাঙ্গা  জেলার জেলা প্রশাসক মহোদয়ের আসুহস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top