আজ: সোমবার, ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ,   | সময়: রাত ১০:১৭ |

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইন

নদী রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে পরিবেশ রক্ষার শপথ

 ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রতিনিধি  :

১২ নভেম্বর ২০২৪, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: দেশের নদী ও জলাশয় রক্ষায় একমাত্র সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব বলে মত দিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অনুষ্ঠিত এক আলোচনাসভায় উপস্থিত বিশিষ্টজনেরা। তারা আরও বলেন, দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ সুরক্ষায় সকলের ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ প্রয়োজন।  

মঙ্গলবার সুরসম্রাট আলাউদ্দিন মিউজিক হলে ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের আওতায় আয়োজিত ‘নদী ও জলাশয় সুরক্ষা: প্রত্যাশা এবং সুপারিশ’ শীর্ষক এই আলোচনাসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে এবং স্থানীয় অংশীদারদের সহযোগিতায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শব্দদূষণ, স্বাস্থ্যসেবার মান, বাল্যবিবাহ এবং মাদক সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠছে বলে মনে করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া এম এ এফ (MAF) সভাপতি এ বি এম মোমিনুল হক। সভায় তিনি বলেন, ‘এক্ষেত্রে আমাদের প্রজন্মকে সচেতন করতে হবে যেন তারা ভবিষ্যতে পরিবেশের জন্য আরও কাজ করতে অনুপ্রাণিত হয়।’  

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল-এর সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার আবুল বাশার বলেন, ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সমস্যাগুলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়া। তিনি বলেন, ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নেই, জ্যাম এবং নাগরিক সমস্যায় জর্জরিত। তরুণদের এই সকল সমস্যার কথা তুলে ধরতে হবে’। এই দায়িত্ব পালনে সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি বলে উল্লেখ করেন। 

‘তরী বাংলাদেশ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও আহ্বায়ক শামীম আহমেদ-এর সঞ্চালনায় ‘নদী ও জলাশয় সুরক্ষাঃ প্রত্যাশা ও সুপারিশ’ শীর্ষক একটি প্যানেল ডিসকাশন অনুষ্ঠিত হয়। এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় বিএডিসি নির্বাহী প্রকৌশলী রনি সাহা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েও খাল খনন প্রক্রিয়া চলমান জানিয়ে বলেন, নদী-র নাব্যতা বজায় রাখতে বোরো মৌসুমে কৃষকের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বিএডিসি। তিনি নদী ও জলাশয় রক্ষার বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার উপর জোর দেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক খালিদ ইবনে সাদিক জানান, গৃহস্থালী বর্জ্যের কারণে নদীর স্বাভাবিক অবস্থা দূষিত হচ্ছে। নদী দখলদার এবং অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।

কারেন্ট জাল এবং চায়না জালের কারণে নদীর বাস্তুসংস্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তবে, নিয়মিত যৌথ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও প্রকৃত জেলেরা অজ্ঞতার কারণে নিবন্ধিত হচ্ছে না বরং এই সুবিধা প্রভাবশালী লোকেরা নিয়ে নিচ্ছে, এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি জাবেদ রহিম বিজন তার বক্তব্যে তিতাস নদীতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বর্জ্য এর কারণে সৃষ্ট সমস্যা এবং তার প্রতিকার নিয়ে মূল্যবান মতামত দেন।

অনুষ্ঠানে আলোচনা সভা ছাড়াও ’নেতা আসছে’ শিরোনামে একটি মঞ্চনাটক পরিবেশিত হয়। এই মঞ্চনাটকের মাধ্যমে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের জন্য সহজে ক্ষুদ্র ঋণ, পাবলিক টয়েলেট, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয়তা সহ বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরা হয়। পাশাপাশি দাবীগুলো amiojittechai.com ওয়েবে প্রকাশের আহ্বান জানানো হয়। মঞ্চনাটক শেষে কুইজ প্রতিযোগিতা, এবং ক্যাম্পেইনের রিল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন উপস্থিত অতিথিরা।

অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মী, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সদস্য, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

ইউএসএআইডির স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের উদ্যোগে পরিচালিত ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনটির অধীনে স্থানীয় জনগণকে তাদের মতামত ও দাবি তুলে ধরার জন্য উন্মুক্ত প্ল্যাটফর্ম www.amiojittechai.com এর মাধ্যমে অভিমত প্রদান করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top