আজ: রবিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, | সময়: রাত ১:১১ |

বান্দরবানে জলবায়ু সুবিচারের দাবিতে তরুণদের জলবায়ু ধর্মঘট ও পদযাত্রা

দীপংকর মল্লিক “বান্দরবান প্রতিনিধি,

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব রোধ, জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারে দাবিতে বান্দরবানে জলবায়ু ধর্মঘট ও পদযাত্রা করেছেন অর্ধ-শতাধিক তরুণ ও জলবায়ু কর্মী। শুক্রবার ১০:৩০ঘটিকায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মুখে শুরু হয়ে প্রেসক্লাব চত্বরে জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচি শেষ হয় । উল্লেখ্য যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় এলাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খরার কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের এই খরা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় জলবায়ুর বৈশ্বিক দরবারে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো না। বাংলাদেশ ইয়ুথনেট গ্লোবাল এর আয়োজনে উক্ত কর্মসূচিতে জলবায়ু কর্মীরা হাতে রঙিন ব্যানার, পোস্টার নিয়ে নানা শ্লোগানে মুখরিত করেন সমাবেশস্থল।

“ভুয়া সমাধান নয়, নবায়নযোগ্য শক্তি চাই”এমন স্লোগান তুলে ধরে তরুণরা বলেন, জ্বালানি নীতিতে নবায়নযোগ্য শক্তিকে অগ্রাধিকার না দিলে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। তারা বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও অর্থায়ন বন্ধ করতে হবে। পরিবেশকে হুমকি থেকে বাঁচতে আমরা ক্ষতিপূরণ নয় সমাধান চাই। সমাবেশে বক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট তুলে ধরে তারা বলেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য টেকসই ও বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়তে হলে জ্বালানি নীতিতে নবায়নযোগ্য উৎসগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কার্বন নিঃসরণ কমাতে জীবাশ্ম জ্বালানি-নির্ভর বিদ্যুতে বিশ্বের উন্নত দেশ এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে পাশাপাশি স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদগুলোও রক্ষা করতে হবে। ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের উপর গুরুত্বারোপ করে সমাবেশে জলবায়ু কর্মীরা বলেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অবশ্যই বহুজাতিক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকেও গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারের সমন্বিত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি) বাস্তবায়িত হলে ব্যয়বহুল ও দূষিত জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার আরও বাড়বে, যা জলবায়ু লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তারা এই পরিকল্পনা দ্রুত সংশোধনের দাবি জানান।

অতিথির বক্তব্য, ইয়ুথনেট গ্লোবাল বান্দরবান জেলার জেলা সমন্বয়ক শাওন বড়ুয়া বলেন, আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলো যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে অর্থ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে হবে। ইয়ুথ লিডার রুমানা আক্তার প্রিয়া বলেন আমরা মূলত বিশ্বনেতাদের কাছে তুলে ধরতে চাই আমরা কোন ক্ষতিপূরণ চাই না, আমরা আমাদের অধিকার চাই, আমরা এই জলবায়ু দূর্ষণ রোধ করতে চাই। তা না হলে আমরা যত তরুণ রয়েছি সবাই মিলে আবার আন্দোলনে নামব। পাশাপাশি ব্যক্তারা জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপর চাপিয়ে দেওয়া জলবায়ু ঋণ নিঃশর্তভাবে মওকুফ করার দাবিও জানানো হয়। এছাড়াও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইয়ুথনেট গ্লোবাল’র চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী সাজ্জাদ হোছাইন, বান্দরবান জেলা সহ- সমন্বয়কারী জাহেদ হোসেন, সদস্য মংএ জজ, সাবেক জেলা সমন্বয়কারী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আসিফ ইকবাল ও বিভাগীয় অ্যাডভাইজার হাবিব আলমাহমুদ এবং সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন মোঃ ইব্রাহিম। ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী সমন্বয়কারী সোহানুর রহমান বলেন, “জলবায়ু সংকটকে বিবেচনায় রেখে আমাদের শক্তি পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের ভবিষ্যৎ জীবাশ্ম জ্বালানির মুনাফার জন্য বিক্রি করা চলবে না। নবায়নযোগ্য শক্তির প্রসারই একমাত্র টেকসই পথ।” সুইডিশ জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গের গড়ে তোলা স্কুল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’-এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশে ‘ইয়ুথনেট গ্লোবাল’, এবং ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশ গ্রুপ’ এ কর্মসূচির আয়োজন করে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, একই দিনে দেশের ৫০টি জেলায় একযোগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়, যেখানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

২০১৮ সাল থেকে বিশ্বের নানা প্রান্তে ‘ফ্রাইডেস ফর ফিউচার’ আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা রেখে আসছে। বাংলাদেশে ইয়ুথনেট গ্লোবাল প্রতিবছর এই বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top